আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে জামায়াতে ইসলামী কোনো শঙ্কা দেখে না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের। তবে সুষ্ঠু ভোটের জন্য জুলাই সনদসহ সংস্কার প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সকালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তাহের।
সকালে বিমানবন্দরে পৌঁছার পর ভিআইপি লাউঞ্জে জামায়াতের এই নেতাকে ফুল দিয়ে সংবর্ধনা দেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমির মুহাম্মাদ শাহজাহানসহ দলটির অনেক নেতাকর্মী।
আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন নিয়ে আমরা কোনো শঙ্কা দেখি না। কিন্তু ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নিয়ে কতিপয় বিষয়ে আমাদের সমাধান হওয়া অত্যন্ত জরুরি। প্রধান উপদেষ্টাসহ নিউইয়র্ক সফরকালে যেহেতু অনেক উপদেষ্টা ছিলেন, আমরা সেখানে সবাইকে বলেছি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনটা হয়ে যাওয়া দরকার। তবে কোনো নির্বাচন সমস্যা সমাধান দেবে না।’
উদাহরণ দিয়ে জামায়াতের এই নেতা বলেন, ২০২৪, ২০১৮, ২০১৪ সালেও তো নির্বাচন হয়েছে নাকি? এসব নির্বাচন কি দেশের সমস্যা বাড়াইছে না কমাইছে? নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হওয়া উচিত— কারণ একটি গণতান্ত্রিক, পিপলস রিপ্রেজেন্টেটিভ গভর্নমেন্ট আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা বলে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, জনগণের অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনই সমস্যার সমাধান। এই নির্বাচনের জন্য কতিপয় বিষয়ে অত্যন্ত দ্রুত ও দৃঢ়তার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, তাহের বলেন, জুলাই সনদসহ আমরা কতিপয় বিষয়ে রিফর্ম বা সংস্কার করেছি। এটা আরও তিন মাস আগে হয়ে যেতে পারত। সব দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে, তারপরও এটা বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে এইভাবে, সেইভাবে।
‘এ রকম যদি ষড়যন্ত্র চলে আর সংস্কার যদি বাস্তবায়ন না করে, তাহলে তো সবকিছুই প্রশ্নবোধক হয়ে যাবে। এজন্য ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে হবে। তার আগে খুবই অল্প সময়ের ব্যবধানে সংস্কারের ব্যাপারে যে ঐকমত্য হয়েছে, তার আইনি ভিত্তি দিয়ে সংস্কারের ভিত্তিতেই নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। এটা খুবই পরিষ্কার।’
যারা সংস্কার বাস্তবায়নে বাধা দিচ্ছেন, অথবা সংস্কার বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে যে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে, কোনো কারণে যদি নির্বাচন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাদেরকে এর দায়িত্ব নিয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদান ও যুক্তরাষ্ট্র সফর সম্পর্কে জামায়াতের এই নেতা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছি। এখানে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন ছিল মূল। এটা সব দেশের প্রধানদের সম্মেলন। তবে বাংলাদেশই প্রথম রাষ্ট্র যেখানে সরকার প্রধানের সঙ্গে সরকারের নয়, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এজন্য তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, সারা বিশ্বে এটা এবার প্রতিফলিত হয়েছে যে, রাষ্ট্রের বড় বড় সমস্যায়, সমাধানে, বড় ইস্যুতে বাংলাদেশ জাতিগতভাবে ঐক্যবদ্ধ। আমরাও সেটা তুলে ধরেছি। আমরা ইনভেস্টমেন্ট ফোরামে অংশ নিয়েছি। সেখানে কথা বলেছি। ফরেন মিনিস্টার্স মিটিংয়ে অংশ নিয়েছি। সেখানে আমি বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছি। এনআরবি বা নন রেসিডেন্স বাংলাদেশের একটি প্রোগ্রামে প্রধান উপদেষ্টাসহ আমরা সফরসঙ্গী তিন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেছি। আমেরিকাসহ আশপাশের দেশের বাংলাদেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও এতে অংশগ্রহণ করেন। তাদের ব্যাপারে আমরা কী চিন্তা করি, সেটা নিয়ে কথা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রবাসীদের ভোটের অধিকারের ব্যাপারে কথা হয়েছে। এই দাবিটা জামায়াতে ইসলামীই প্রথম করেছে, সরকারও নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। আমি বলেছি, এখানে সহযোগিতা করার জন্য। জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে তারা ভোটার হবেন এবং ভোট দিতে পারবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘আমি চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাইনি। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়েছি। এরপর শিকাগোতে গিয়েছি। সেখানে আমার মেয়ে পড়াশোনা করে। তার সঙ্গে দেখা করেছি।
যুক্তরাষ্ট্রে থাকতেই একটি খবর ছড়ায় যে আপনি ভারত সফরে গেছেন। ভারতের সেনা প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। অনেকেই বলছেন, আপনি চিকিৎসার জন্য গেছেন— এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাহের বলেন, এসব গুজব। আজকাল অনেক কিছু দেখতে হচ্ছে। এই গুজবের মধ্যেই একটা নাচ দেখলাম। সবার প্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে নাচছেন প্রধান উপদেষ্টা। দেখলাম ভালোই নাচছেন। এখন এগুলো কী? গুজব? এগুলো এআই দিয়ে তৈরি ন্যাক্কারজনক কাজ। মানুষ এ ধরনের বাজে জিনিস, চরিত্র হননের অপচেষ্টা এখন বোঝে।